• ঢাকা
  • শনিবার:২০২৪:এপ্রিল || ০৬:০৯:৪৮
প্রকাশের সময় :
অগাস্ট ৩, ২০২৩,
৫:০৪ অপরাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট :
অগাস্ট ৩, ২০২৩,
৫:০৪ অপরাহ্ন

৪০৫ বার দেখা হয়েছে ।

রাজনৈতিক শিষ্টাচারের বিকল্প নেই

রাজনৈতিক শিষ্টাচারের বিকল্প নেই

গত কয়েক মাস হলো রাজনীতির মাঠ গরম, অস্থিতিশীলতার ভারি বাতাস বইছে। নির্বাচনকে ঘিরে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি দুই দলই এখন রাজনীতির মাঠে এক অন্যের প্রতিদ্বন্দ্বী। সারা দেশেই চলছে দুই দলের মিছিল মিটিং। অনেকটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, আগামী বছর রাজনীতিতে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় থাকবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং রাজনৈতিক দলগুলোর কার্যক্রম থাকবে নির্বাচনকে কেন্দ্র করেই। এরই মধ্যে বাংলাদেশের দুটি রাজনৈতিক দলই রাজপথ দখলে রাখতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। তারা রাজপথে পালটাপালিটি সমাবেশ করছেন। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে মাঠ দখলের লড়াইয়ে দেখা যাক কে জেতে কে হারে?
বিএনপি বা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে অনেক অমিল থাকলেও একটি মিল আছে। নির্বাচনে হারলেই তারা ষড়যন্ত্রের গন্ধ খোঁজে। বিএনপি যেমন ২০০৮ সালের নির্বাচনে তাদের হারকে মানতে পারেনি, তেমনি আওয়ামী লীগও ২০০১ সালের নির্বাচনে তাদের হারকে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র বলে শোরগোল তুলেছিল। দুই দলই নিজেদের জনপ্রিয়তাকে চিরন্তন বলে দাবি করে বসে। দু’দলেরই রাজনৈতিক বোঝাপড়ায় পার্থক্য যে খুব বেশি আছে তা তাদের আচরণে মনে হয় না। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এখন চাইবে নিজেদের অবস্থান পুনরায় পাকাপোক্ত করতে। তেমনি বিএনপিও পনেরো বছরের খরা কাটাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। বিশেষত বিদেশি কয়েক দেশের বিভিন্ন রকমের পর্যবেক্ষণ বিএনপিকে মনে হয় অনেক আশান্বিত করেছে। আমেরিকার ভিসানীতিসহ বিভিন্ন রকমের বক্তব্যে বিএনপি মাঠে নেমেছে। এছাড়াও বড়কথা হচ্ছে দুটি দলই নির্বাচনমুখী। নির্বাচন না থাকলে তাদের মূল্য নেই। সুতরাং নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে শীতল হয়ে আসা বিএনপি আবার জেগে উঠেছে। একই অবস্থা আওয়ামী লীগেরও রুটিন প্রোগ্রাম ছাড়া দলের কোনো কার্যক্রম এতদিন চোখে পড়েনি। তারপরও যেটা সত্য তাহলোÑ নির্বাচনকালীন সরকার ইস্যুতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি কোনো দলই কাউকে ছাড় দিতে রাজি নয়। তাদের হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে সমঝোতার ন্যূনতম সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। তারা তো নিজেদেরকে নিয়েই ব্যস্ত। জনগণকে নিয়ে ভাবার সময় কোথায় তাদের। এই যদি হয় দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের অবস্থা, তবে সাধারণ জনগণের কী হবে? প্রতিনিয়ত নিত্যপণ্যের জিনিসপত্রের দাম ঊর্ধ্বগতি। বাজারে জিনিসপত্রের দাম লাগামহীন। সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রিত বাজার। ডেঙ্গুর আক্রমণে হাসপাতালগুলোতে রোগী ধরে না। সেদিকে প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের কোনো খেয়ালই নেই। তারা তো নিজেদের নিজ নিজ বসার জায়গাটাকে দখল করার জন্য মরিয়া। বিপরীতমুখী অবস্থানে রাজনীতি এখন রাজপথে। রাজনীতির মাঠ নিজেদের দখলে রাখতে পালটাপালটি কর্মসূচি পালন করে আসছে তারা। এবার দল দুটির টার্গেট ঢাকাকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখা। সম্প্রতি গত ২৮ জুলাই রাজধানীতে মহাসমাবেশের ডাক দেয় বিএনপি। মহাসমাবেশ উপলক্ষে সারা দেশ থেকে নেতাকর্মীরা রাজধানী ঢাকায় অবস্থান নেয়। পাশাপাশি বিএনপিকে প্রতিহত করে ঢাকার রাজপথ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে মরিয়া ক্ষমতাসীনরা। সংকট সমাধানে দুই দলের মধ্যে ইতিবাচক মনোভাব দেখা যাচ্ছে না। দুই পক্ষই যদি এক দফা ঘোষণা করে অনড় অবস্থানে থাকে তাহলে আলোচনার মাধ্যমে সংকট সমাধানের পথ আরও কঠিন হবে। যার যার অবস্থানে তারা অনড় থাকলে দেশে সহিংসতা, উত্তাপ, উত্তেজনা বাড়বে, যা দেশবাসীর জন্য কোনো ধরনের শুভ বার্তা বহন করে না। দুদলের এই অবস্থায় দেশবাসীর মধ্যে উৎকণ্ঠা বাড়ছে। তাই সাধারণ মানুষের উদ্বেগ এবং দেশের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে দেশের শীর্ষ দুই রাজনৈতিক দলকে ইতিবাচক রাজনীতি করতে হবে। আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদ শেষ হবে ২০২৪ সালের ৩০ জানুয়ারি। সংবিধান অনুযায়ী মেয়াদ শেষ হওয়ার তিন মাসের মধ্যে পরবর্তী নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে। সেই হিসেবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শুরু হবে আগামী নভেম্বর মাস থেকে। তবে ওই নির্বাচন ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার’ নাকি ‘দলীয় সরকার’ কার অধীনে হবে, এমন প্রশ্নে মুখোমুখি অবস্থানে দেশের বড় দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি।
নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আওয়মী লীগ ও বিএনপি বিপরীতমুখী অবস্থানে। সংবিধান অনুযায়ী দলীয় সরকারের অধীনেই নির্বাচন হবেÑএমন সিদ্ধান্ত থেকে একচুলও নড়বে না ক্ষমতাসীনরা। অন্যদিকে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে মাঠের বিরোধী দল বিএনপি। সরকারের পদত্যাগে একদফা ঘোষণা করেছে দলটি। দাবি আদায়ে অলআউট প্রস্তুতি নিয়ে রাজপথে তারা। বিএনপির আন্দোলন মোকাবিলা এবং নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে সক্রিয় ক্ষমতাসীনরাও। তাহলে কোন দিকে যাচ্ছে দেশের রাজনৈতিক অবস্থা? রাজপথ দখলে রাখতে কয়েক মাস ধরেই এ দুটি দল ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করে আসছে। শুরুতে শান্তিপূর্ণ থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে তা সহিংসতায় রূপ নিয়েছে। আওয়ামী লীগ বলছে, আগামী নির্বাচন হবে সংবিধান মেনে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে। শেখ হাসিনার অধীনে ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন হবে না। অন্যদিকে বিএনপি বলছে, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ছাড়া বিএনপি ও তাদের মিত্ররা নির্বাচনে অংশ নেবে না। শেষ পর্যন্ত বিএনপি নির্বাচনে না আসলে পরিস্থিতি কি হবে সেটাও বোঝা দুষ্কর হয়ে উঠছে। বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের সম্পর্ক বহুদিনের। বিএনপির মন্ত্রিসভায় জামায়াত ছিলো। বাংলাদেশের পতাকা জামায়াতের যুদ্ধাপরাধীদের গাড়িতে উড়াতে সাহায্য করেছে বিএনপি। এখন জামায়াত কোন দলে যাবে ভোটের হিসাবে এটা একটা বড় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। আওয়ামী লীগ জনগণকে যদি বোঝাতে চায় যে বিএনপি থেকে জামায়াত আলাদা তা হলেন লাভ কার-ভোটের হিসাবে এটা একটা বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দেবে। ’৯৫ তে যখন বিএনপির আওয়ামী লীগ একের পর এক হরতাল অবরোধ করেছিল, তখন সবাই দোষ দিত আওয়ামী লীগকে। তখন কিন্তু কেউ হরতাল বা অবরোধের জন্য বিএনপিকে দোষ দিত না। কিন্তু কি অবাক করা ব্যাপার, বিএনপি একের পর এক মিছিল, মিটিং করছে, জনদুর্ভোগ বাড়ছে। এখন বিএনপির কোনো দোষ হচ্ছে না। দোষ দেয়া হচ্ছে আওয়ামী লীগকে। কি অদ্ভুত? যেন সব সময় সব দোষের একমাত্র ভাগিদার আওয়ামী লীগ। রাজনৈতিকভাবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুই মেরুতে অবস্থান করে। কেউ কারও মুখ দেখতে নারাজ। এটা রাজনৈতিক সংস্কৃতির মধ্যে পড়ে না। রাজনৈতিক সংস্কৃতি না থাকলে রাজনীতির কদাকার রূপটি দেখা যায়। তাতে মানুষের রাজনীতির ওপর অনাগ্রহ বাড়ে। আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও তাদের অঙ্গসংগঠনগুলো মাঝে মধ্যেই যে অস্থিতিশীলতা তৈরি করছে তাতে রাজনৈতিক শিষ্টাচার বলতে কিছু থাকছে না। বিদেশিরা দেখছে বাংলাদেশের শিষ্টাচারহীন রাজনীতি। এটা দেশ ও দশের ভাবমূর্তির জন্যও খারাপ। এতে মানুষ হতাশ হয়। ক্ষুব্ধ হয়- নিরাপত্তাহীন মনে করে নিজেকে। এসব আচরণ পরিহার করতে হবে। তাই দুই রাজনৈতিক দলেরই উচিত হানাহানি, মারামারি না করে দেশের স্বার্থে, জনগণের মিলেমিশে কাজ। এতে দুই দলেরই মঙ্গল হবে। মঙ্গল হবে জনগণের। দেশ ও জনগণের জন্য-সুষ্ঠু রাজনৈতিক পরিবেশের জন্য রাজনৈতিক শিষ্টাচারের বিকল্প নেই।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট