• ঢাকা
  • শুক্রবার:২০২৪:মার্চ || ০৭:১৮:৫৯
প্রকাশের সময় :
ফেব্রুয়ারী ২৫, ২০২৩,
৪:১০ অপরাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট :
ফেব্রুয়ারী ২৫, ২০২৩,
৪:১০ অপরাহ্ন

৩২১ বার দেখা হয়েছে ।

বিদ্যুৎ সঞ্চয় ও সাশ্রয়ে পদক্ষেপ নিন

বিদ্যুৎ সঞ্চয় ও সাশ্রয়ে পদক্ষেপ নিন

শীতের প্রভাব শেষ হতে না হতেই বিদ্যুৎ পরিস্থিতি অবনতির দিকে। জ্বালানি সংকটে এবার শীতেও কমবেশি লোডশেডিং হয়েছে দেশের বিভিন্ন স্থানে, যা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে। কৃষি খাতে উৎপাদন খরচ বেড়েছে। জ্বালানি সংকটে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ দরকার তা পাওয়া যাচ্ছে না। মার্চ থেকে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারে। উৎপাদন সক্ষমতা উদ্বৃত্ত থাকা সত্ত্বেও গ্রীষ্মে বিদ্যুৎ পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। ডলার সংকটের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রাথমিক জ্বালানি গ্যাস, কয়লা ও ফার্নেস অয়েল চাহিদা অনুযায়ী আমদানি করা সম্ভব হবে না। ফলে বহু সচল বিদ্যুৎকেন্দ্র অচল থাকতে পারে। রমজানেও বিদ্যুতের দুর্ভোগ পোহাতে হতে পারে বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন। জ্বালানি সংকটে গত বছরের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ঘোষণা দিয়ে লোডশেডিং করে বিদ্যুৎ বিভাগ। দিনে ২ থেকে সর্বোচ্চ ১২ ঘণ্টা লোডশেডিং করা হয় কোনো কোনো এলাকায়। চলতি বছরের প্রথম মাসেই দুই দফায় ১০ দশমিক ২৩ শতাংশ বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। বাড়তি দাম দিয়েও বিদ্যুতের ভোগান্তি থেকে মুক্তির আশ্বাস মিলছে না। আগামী মাসগুলোতে বিদ্যুতের দাম আরো বাড়তে পারে বলে সরকারের পক্ষ থেকে আভাস দেওয়া হচ্ছে। শীত শেষে হালকা গরম পড়ছে। চলছে সেচ মৌসুম। মার্চে তৃতীয় সপ্তাহ থেকে শুরু হবে রমজান মাস। ফলে আগামী দিনগুলোতে আবহাওয়ার উত্তাপের সঙ্গে সেচ ও রমজানের বাড়তি চাহিদা মেটাতে হবে বিদ্যুৎ বিভাগকে। বিদ্যুৎ বিভাগ কি পারবে সেচ মৌসুমে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা মেটাতে। আগামী এপ্রিল-মে মাসে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা ধরা হয়েছে ১৬ হাজার মেগাওয়াট। প্রকৃত চাহিদা এর চেয়েও বেশি বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন। আসন্ন সংকট মোকাবিলায় গ্যাস সরবরাহ বাড়াতে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানি শুরু হয়েছে। বাড়তি জ্বালানি তেল আমদানির পরিকল্পনাও চূড়ান্ত। গ্রীষ্মে সরকারের বড় ভরসা কয়লাভিত্তিক বৃহৎ তিন বিদ্যুৎকেন্দ্র পায়রা, রামপাল এবং ভারতে আদানির গড্ডা। এসব কেন্দ্রে কয়লার সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখা যাবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কয়লা আমদানি ব্যাহত হচ্ছে ডলার সংকটে। অর্থের অভাবে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র মালিকদের বিল পরিশোধ করতে পারছে না বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। এলসি জটিলতায় চাহিদা অনুসারে ফার্নেস অয়েল আমদানি করতে পারছেন না বেসরকারি উদ্যোক্তারা। পেট্রোলিয়াম করপোরেশনকেও (বিপিসি) ভুগতে হচ্ছে এলসি জটিলতায়। ডলার সংকটে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে পেট্রোবাংলার এলএনজি আমদানি কার্যক্রমও। আমদানি ব্যয় মেটাতে ও বিল পরিশোধে আগামী মে পর্যন্ত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ৬০০ কোটি ডলার প্রয়োজন হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। সরকার এই ডলার জোগান দেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে বলে জানা গেছে। এবার গরমে অন্তত তিন হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি থাকতে পারে পিক আওয়ারে। ফলে লোডশেডিং পরিস্থিতি গতবারের চেয়ে বেশি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। দেশে বিদ্যুতের উৎপাদন সক্ষমতা আছে ২৪ হাজার ১১৪ মেগাওয়াট। এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ উৎপাদন গত বছরের ১৭ এপ্রিল ১৪ হাজার ৭৮২ মেগাওয়াট। জ্বালানি সংকটে সক্ষমতা অনুসারে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়নি কখনোই। বিদ্যুৎ উৎপাদন না করলেও কেন্দ্র মালিকদের চুক্তি অনুসারে ঠিকই টাকা দিতে হয় সরকারকে। ক্যাপাসিটি চার্জ (কেন্দ্র ভাড়া) হিসেবে গত ১২ বছরে বেসরকারি মালিকদের এক লাখ কোটি টাকার ওপর অর্থ পরিশোধ করেছে সরকার। সামনে আরো নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হচ্ছে। ফলে এই খরচ আরো বাড়বে। পিডিবির তথ্য থেকে জানা গেছে, গত শনিবার বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১০ হাজার ৫৮৬ মেগাওয়াট। উৎপাদন ছিল সর্বোচ্চ ১০ হাজার ৫৮৬ মেগাওয়াট। পিডিবির মতে, দেশে কোনো লোডশেডিং ছিল না। তবে বিতরণ কোম্পানিগুলো বলছে, এবারের শীতে -দেশের বিভিন্ন এলাকায় এক থেকে দুই ঘণ্টা লোডশেডিং করতে হয়েছে। কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা বলেছেন, দলীয় লোকদের বিদ্যুৎ ব্যবসা দিয়ে অপরিকল্পিতভাবে উৎপাদন ক্ষমতা বাড়িয়েছে সরকার। এখন বসিয়ে বসিয়ে মাসে হাজার হাজার কোটি টাকা ক্যাপাসিটি পেমেন্ট গুনছে। যা উসুল করা হচ্ছে বারবার বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে। বাড়তি দাম দিয়েও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ মিলছে না। এবার গরমে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। চলছে বোরো মৌসুম। এই মৌসুমে বোরো আবাদের জন্য পানির চাহিদা বেশি থাকে। পাশাপাশি থাকে বিদ্যুতের চাহিদাও। যদিও বিদ্যুৎ সচিব বলেছেন, আশা করছি সামনের গরমে সংকট হবে না। সরকার ডলার সরবরাহ স্বাভাবিক করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। তাই জ্বালানি সরবরাহে সমস্যা হবে না।
রাশিয়া বিশ্বের অন্যতম প্রধান জ্বালানি তেল, গ্যাস উৎপাদনকারী এবং রপ্তানিকারক দেশ। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের এক বছর পার হয়ে গেছে। যুদ্ধ শুরুর পর দেশটির তেল সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থেকে বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়তে শুরু করে। বিশ্বে জ্বালানি তেলের দামের পাশাপাশি গ্যাসের দামও আকাশ ছুঁয়েছে। এর আঘাত এনেছে বাংলাদেশেও। বাংলাদেশে দফায় দফায় বেড়েছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি তেল এবং গ্যাসের দাম।
দেশে এমন অনেক জায়গা রয়েছে যেখানে অপ্রয়োজনীয়ভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হয়। এসব অপ্রয়োজনীয় স্থান চিহ্নিত করতে হবে। যেসব অবৈধ সংযোগ রয়েছে, সেগুলো বন্ধের উদ্যোগ নিতে হবে। বছরের পর বছর ধরে চলা সিস্টেম লস নিরসনে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। বিদ্যুৎ সরবারাহ নির্বিঘœত করতে দেশের অভ্যন্তরে গ্যাসের উৎপাদন বৃদ্ধির ওপর জোর দিতে হবে। যেসব বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ পাওয়া যায় না, অথচ সরকারকে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে, সেগুলো বন্ধ করার চিন্তা-ভাবনা করতে হবে। সারা দেশে প্রচুর বিদ্যুৎ অপচয় হচ্ছে। অপচয় বন্ধের পাশাপাশি বিশ্ব বাস্তবতার নিরিখে বিচার-বিশ্লেষণ করে বিদ্যুৎ সঞ্চয় ও সাশ্রয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট