• ঢাকা
  • মঙ্গলবার:২০২৪:এপ্রিল || ১২:৩৩:৩৫
প্রকাশের সময় :
এপ্রিল ৪, ২০২৩,
৪:১৯ অপরাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট :
এপ্রিল ৪, ২০২৩,
৪:১৯ অপরাহ্ন

৩২৪ বার দেখা হয়েছে ।

বঙ্গবাজার অগ্নিকাণ্ডে ব্যবসায়ীদের আহাজারি, কাজ হারানোর শঙ্কায় কর্মচারীরা

বঙ্গবাজার অগ্নিকাণ্ডে ব্যবসায়ীদের আহাজারি, কাজ হারানোর শঙ্কায় কর্মচারীরা

রাজধানীর বঙ্গবাজার কয়েকটি মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় প্রায় ৫ হাজার দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে দাবি করেছে দোকান মালিক সমিতি। আর এই ঘটনায় দুই হাজার কোটি টাকার মালামাল পুড়ে গেছে। যার ফলে, কয়েক হাজার ব্যবসায়ী সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। একইসঙ্গে ঈদের আগেই এসব মার্কেটে কর্মরত অর্ধ লাখ কর্মচারী বেকার হয়ে পড়ার এবং বেতন না পাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
রিয়াজুল গার্মেন্টস, খান ফ্যাশন, এস এ গার্মেন্টস, খান শাড়ি বিতানসহ বঙ্গ-মার্কেটে ৫টি দোকান ছিল ব্যবসায়ী মো. মামুনের। ঈদকে সামনে রেখে ৫টি দোকানে ১০ কোটি টাকার মালামাল তুলেছিলেন। কিন্তু আগুনে এক নিমিষে সব শেষ হয়ে গেছে এই ব্যবসায়ীর। আর মুহূর্তের মধ্যে সব কিছু হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে মার্কেটের পাশে ফুটপাতে আগুন থেকে বাচাঁতে পারা অল্পকিছু মালামালের ওপর বসে কাদঁছেন।
এই ব্যবসায়ী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ১০ কোটির টাকার মধ্যে ১ কোটি টাকার মতো মালামাল বিক্রি করতে পেরেছেন গত কয়েক রমজানে। বাকি পুরো টাকার মালামাল দোকান ও গুদামে ছিল। এরমধ্যে কয়েক লাখ টাকার মালামাল রক্ষা করতে পেরেছেন। বাকি সব মাল পুড়ে গেছে। এখন কীভাবে তিনি ঋণ পরিশোধ করবেন, সংসার চালাবেন, কীভাবে দোকানের কর্মচারীদের বেতন দেবেন, তা নিজেও জানেন না।
ব্যবসায়ী মামুন বলেন, আমার জীবনের সব উপার্জন যে আগুনে পুড়ে গেল, এই ক্ষতির দায় নেবে কে? কে আমার ঋণ পরিশোধ করবে? আমার তো কিছুই নেই। সব তো শেষ হয়ে গেছে।
বঙ্গবাজার মার্কেটে ‘মায়ের দোয়া’ নামেই ৬ দোকান ছিল ব্যবসায়ী মোহাম্মদ হেলাল খানের। তার দাবি, দোকানে ৬ কোটি টাকারও বেশি মালামাল ছিল। কোনও রকমে একটি দোকানের মালামাল বের করতে পেরেছি। গোডাউনের মালামালও বের করতে পারিনি। কিছু পুড়েছে, বাকি সব পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে।
হেলাল খান জানান, ঈদ উপলক্ষ্যে ৩ কোটি ৭৬ লাখ টাকার মালমাল তুলেছি। সবই নষ্ট হয়েছে। এই অবস্থায় সরকার যদি আমাদের সহযোগিতা করে, তাহলে কোনোরকম উঠে দাঁড়াতে পারবো। নয়তো আমাদের মরণ ছাড়া আর কোনও উপায় নেই।
ব্যবসায়ী মামুন, হেলাল খানের মতো হাজারও ব্যবসায়ীর দোকান পুড়ে গেছে আগুনে। তাদের মতো সবাই মার্কেটের পাশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুসলিম হলের সীমনাপ্রচীর ঘেঁষা সড়কের ফুটপাতে সব হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। কেউ-কেউ আগুন লাগার ঘটনা মোবাইল ফোনে পরিবার-পরিজনকে কান্নাজনিত কণ্ঠে জানাচ্ছেন।
ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম কাদঁতে-কাদঁতে মোবাইল ফোনে কাউকে বলতে শোনা যায়, সবার সবকিছু দেখা হয়ে গেছে। আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিস আইছে, নৌ বাহিনী আইছে, পুলিশ, র‌্যাব সব আইছে; কিন্তু কিছুতেই কিছুই হচ্ছে না। এখন আল্লাহর দিকে চাইয়া আছি। আল্লাহ বৃষ্টি দিক। রহম দিয়ে সবকিছু ঠান্ডা করে দিক। আর কিছুই চাই না। কিছুই চাওয়ার নাই। আমাগো সবকিছু শেষ হয়ে গেছে।’
এই ব্যবসায়ী বলেন, ‘সামনে ঈদ। ছাওয়াল-পাওয়ালদের কতকিছু কিনে দেব বলে কথা দিছিলাম। এখন আমাগো সবকিছু শেষ হয়ে গেছে। আল্লাহ রহম না করলে আর কিছুতেই কিছু করা যাবে না।’
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ব্যবসায়ীদের মতো কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখা গেছে অনেক কর্মচারীকে। তারা বলছেন, মালিকদের কাছে তো গত কয়েক রমজানের বেচা-বিক্রির কিছু টাকা হলেও আছে। সেটা দিয়ে কিছুদিন হলেও চলতে পারবে। কিন্তু যারা কর্মচারী তাদের হাতে কোনও টাকা পয়সা নেই। তারা কীভাবে পরিবার-পরিজন নিয়ে চলবে।
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার স্থলের পাশের ফুটপাতে কথা হয় শিল্পী ফ্যাশন নামের একটি দোকানের কর্মচারী জাকির হোসেনের সঙ্গে। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আগুনে পুড়ে যাওয়া মার্কেটগুলো লাখের ওপরে কর্মচারী রয়েছে। অধিকাংশ দোকানে কর্মচারী গত মাসেরও বেতন পায়নি। এর মধ্যে আগুনে মার্কেটের সব পুড়ে গেছে। এখন মালিক কবে গত মাসের বেতন দেবে সেটাও জানি না। আর ঈদের আগে মার্কেট ঠিক করা সম্ভব হবে কি না, দোকান আবার খুলবে কি না সেটাও জানি না। এই অবস্থায় আমরা কীভাবে ঈদ করবো বলেন। কীভাবে ঘর ভাড়া দেবে, কীভাবে ছেলে-মেয়ে, মা-বাপেরে টাকা পাঠামু?
জাকিরে পাশে দাড়িয়ে থাকা আরেকটি দোকানের কর্মচারী হেলাল বলেন, মালিকরা তো আগুনের ঘটনা দেখিয়ে ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারবে। সরকারও তাদের সহযোগিতা করবে। কিন্তু আমরা তো সেটা পারবো না। মালিক বেতন না দিলে তো কিছু করার নেই। মালিক যদি বলে, আগুনে সবকিছু পুড়ে গেছে, কীভাবে বেতন দেবো, তখন আমরা কি করবো। আবার এখন তো কোথাও চাকরি পাবো না। কিছুই মাথায় আসছে না, কী করবো। কীভাবে ঈদ করবো পরিবার নিয়ে।