• ঢাকা
  • শুক্রবার:২০২৪:মার্চ || ০৫:০৬:৫৯
প্রকাশের সময় :
ডিসেম্বর ২৩, ২০২২,
৫:১৮ অপরাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট :
ডিসেম্বর ২৩, ২০২২,
৫:১৮ অপরাহ্ন

৪১৬ বার দেখা হয়েছে ।

এবার আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় অংশ নিচ্ছে ১২ দেশ

এবার আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় অংশ নিচ্ছে ১২ দেশ

পূর্বাচলের স্থায়ী প্যাভিলিয়নে ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারিতে শুরু হতে যাচ্ছে ২৭তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা। গত বছরের ন্যায় এবারও পূর্বাচলের ৪ নম্বর সেক্টরে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে হবে এই মেলা। প্রথম দিন থেকেই মেলা জমিয়ে তুলতে চান ব্যবসায়ীরা। তাই আগেই স্টল নির্মাণের কাজ শুরু করে দিয়েছেন তারা। আর স্টল ও প্যাভিলিয়ন নির্মাণে ব্যস্ত সময় পার করছেন মালিক, শ্রমিকরা। যেন দম ফেলার সুযোগ নেই। আগামী ১ জানুয়ারি বাণিজ্য মেলার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জানা গেছে, রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে ১৯৯৫ সাল থেকে মেলার আসর বসেছে রাজধানী ঢাকার আগারগাঁওয়ে। তবে রাজধানীতে চাপ কমাতে গত বছর ঢাকার অদূরে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার শীতলক্ষ্যার তীরে পূর্বাচল উপশহরের ৪ নম্বর সেক্টরের বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার আয়োজন করা হয়। এটিই মেলার স্থায়ী প্যাভিলিয়ন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মেলা উদ্বোধনকে সামনে রেখে সকল প্রস্তুতির কাজ চলছে তোড়জোড়। দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে স্টল নির্মাণের কাজ। আগে বরাদ্দ পাওয়ায় স্টল নির্মাণের কাজ আগেই শেষ হবে বলে প্রত্যাশা ব্যবসায়ীদের। এক্সিবিশন সেন্টার ‘এ’ ও ‘বি’র ভেতরে-বাইরের আঙিনায় শতাধিক স্টল নির্মাণের কাজ চলছে। কাঠ, বাঁশ ও হার্ডবোর্ড দিয়ে বানানো হচ্ছে অস্থায়ী স্টল। স্টিল, ইট ও কংক্রিট দিয়ে বহুতল প্যাভিলিয়নের গাঁথুনির কাজও শেষ পর্যায়ে। দিন-রাত কাজ করছেন নির্মাণ শ্রমিকরা। ২৫-৩০ ডিসেম্বরের মধ্যেই বুঝিয়ে দিতে হবে স্টল। এবার পরিবেশও গতবারের চেয়ে ভালো। কুড়িল থেকে পূর্বাচলে যাতায়াতের রাস্তার কাজ প্রায় সম্পন্ন হওয়া এবং স্টল বাড়ানোয় জমজমাট বাণিজ্যমেলার আশা করছেন ব্যবসায়ীরা।
গতকাল বৃহস্পতিবার মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা যায়, মেলার প্রধান ফটক ও প্রবেশ পথে তিনটি মেগাপ্রকল্পের কাঠামো, বঙ্গবন্ধু কর্ণার তৈরির কাজ চলছে। বেশির ভাগ স্টলের নির্মাণ কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। স্টিল নির্মাণ শেষ হলে স্টলে বোর্ড লাগানো ও রংয়ের কাজ শুরু হবে। অনেক স্টলের কাঠামো দাঁড় করানো শেষ হয়েছে। এসব স্টলের কাজ পুরোপুরি শেষ হতে আরও ৭/৮ দিন সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
ইরানি ফাইবারের মালিক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, গতবারও মেলায় ছিলাম। মেলার শুরুতে ভালো না হলেও শেষের দিকে মেলা জমেছে। এবার যেহেতু স্টল বেশি তাই ভালো কিছু আশা করছি। তাছাড়া মেলায় আসার সবগুলো রাস্তাও ভালো হয়েছে। বাণিজ্য মেলা এবার প্রথম থেকেই জমে উঠবে।
বেঙ্গল পলিমার প্যাভিলিয়নের সাইট ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ এমরান হোসেন বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানের দুইতলা বিশিষ্ট বড় প্যাভিলিয়ন নির্মাণ করছে। আগামী ২৮ ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ সমাপ্ত হবে।
দিল্লি অ্যালুমিনিয়ামের স্টলে কথা হয় ইলেকট্রিক মিস্ত্রি রফিক হাসানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ২০ থেকে ২২ জন শ্রমিক কাজ করছে। পুরো কাঠামোটা স্টিলের তৈরি। ওয়েল্ডিংয়ের কাজ চলছে, রঙের কাজ শুরু হয়নি।
সেভয় আইসক্রিমের সেট নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান শাহা আলী ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, ১৬-১৭ জন শ্রমিক পর্যায়ক্রমে দিন-রাত কাজ করছে। আগামী ৪/৫ দিনের মধ্যে কাঠের ডিজাইন ও রংয়ের কাজ শেষ হবে।
মেলায় স্টল নির্মাণ করতে আসা আনন্দ মেটাল ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কসপের ম্যানেজার চৈতন্য দাস বলেন, মিরপুর থেকে মেলায় কাজ করতে এসেছি। ছোট বড় মিলিয়ে আমরা ১৫টি স্টলের কাজ পেয়েছি। গত ২৮ নভেম্বর থেকে ১৬ জন শ্রমিক দিন-রাত কাজ করছে। মেসার্স মদিনা এন্টারপ্রাইজ, রংপুর ক্রাফট, ইরানি থাই এম্পোরিয়ামের প্যাভিলিয়ন নির্মাণ শেষের দিকে। আগামী ৬/৭ দিনের মধ্যে পুরো স্টলের কাজ সমাপ্ত হবে।
এক্সিবিশন সেন্টার ‘বি’তে লেডিস ফ্যাশন স্টল তৈরির কাজ ঘুরে ঘুরে দেখছিলেন প্রতিষ্ঠানের মালিক সুজন আহসান। তিনি বলেন, এবার মেলার পরিবেশ ভালো। মানুষ সহজেই আসতে পারবে। এবার ভালো ব্যবসা হবে বলে ধারণা করছি। এবার স্টল ফি বেশি, আবার মেকিং খরচও বেশি। তবুও চেষ্টা করছি যত কম টাকা খরচ করে ভালো স্টল করা যায়।
বাণিজ্য মেলায় আসা কাঠ মিস্ত্রি লোকমান, মিলন, শামিম ও রংমিস্ত্রি নাজমুল হক জানান, সকাল ৮টা থেকে রাত ৩টা পর্যন্ত কাজ করছেন তারা। এরপরও কাজ শেষ করতে পারছেন না। রং ও সাজসজ্জা সব মিলিয়ে ৫ থেকে ৬ দিনের মধ্যে স্টল প্রস্তুত হবে। গতবারের তুলনায় এবার মজুরিও মাথাপিছু ২০০ টাকা বেড়েছে।
মি. বাইটের স্বত্বাধিকারী ইঞ্জিনিয়ার খোকন জানান, এবার বড় আকারে দোকান সাজানো হচ্ছে। গতবছরের তুলনায় এবার বেচাবিক্রি ভালো হবে বলে আশা করি। তাছাড়া এবার মেলার প্রচারণাও বেশ ভালো।
ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার গেটের ইজারাদার মের্সাস আবদুল্লাহ এন্টারপ্রাইজের মালিক ও রূপগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মো. ছালাউদ্দিন ভুঁইয়া বলেন, এ বছর আগে থেকেই মেলার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। তাই স্টল নির্মাণের কাজ আগেই শেষ হবে। ৩০০ ফুট সড়ক গত বছরের থেকে এবার অনেক ভাল। এবার মেলায় দর্শনার্থীর সংখ্যা দ্বিগুণ হবে বলে মনে করি।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সচিব ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বলেন, রূপগঞ্জের পূর্বাচলে ৪ নম্বর সেক্টরের বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার ২৭তম আসর আগামী ১ জানয়ারি উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ বছর মেলায় স্টল সংখ্যা বেড়েছে। আশা করি মেলা জমজমাট হবে। পূর্বাচলের বাণিজ্য মেলা সফল করতে ইপিবি সব চেষ্টা করে যাচ্ছে। নিরাপত্তার জন্য মেলায় ২২০টি সিসি টিভি ক্যামেরা বসানো হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘মেলা সফল করতে সকল ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। মেলায় এবারও সাধারণ, প্রিমিয়াম, সংরক্ষিত, ফুড স্টল ও রেস্তোরাঁসহ ১৩ ক্যাটাগরিতে স্টল থাকবে। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানতে থাকবে বঙ্গবন্ধু প্যাভিলিয়ন। কুড়িল বিশ্বরোড ৩০০ ফুট মূল সড়কের কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে। রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে দর্শনার্থীদের মেলায় আসতে যাতে কোনো দুর্ভোগ পোহাতে না হয় সেজন্য সড়কের কাজ দ্রুত শেষ হচ্ছে। দর্শনার্থীদের চলাচলের সুবিধার্থে চালু করা হবে বিআরটিসির স্পেশাল বাস সার্ভিস।
ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী আরও বলেন, এবারের মেলায় দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, তুরস্ক, ইরান, ভারত, ইন্দোনেশিয়াসহ ১২টি দেশ মেলায় অংশ নিচ্ছে। মেলায় বিভিন্ন ক্যাটাগরির ৪২টি প্যাভিলিয়ন , ৩১টি মিনি প্যাভিলিয়ন, ২৩৮টি জেনারেল স্টল, ২৩টি খাবারের হোটেল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ১ লাখ ৫৫ হাজার বর্গফুট আয়তনের দুটি হলে সব স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। নির্মাণাধীন স্টলগুলো ৩০ ডিসেম্বরের আগেই কাজ শেষ হবে। গতবার শিশুপার্ক ছিল না। এবার মিনি শিশুপার্ক থাকছে। পরিবেশও ভালো হয়েছে। পরিসর বড় হয়েছে। গতবার ছিল ২২৫টি স্টল। এবার স্টল হবে ৩৩১টি। গতবারের তুলনায় এবারের মেলাটা আরও বেশি জমজমাট হবে। মেলায় প্রবেশমূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য ৪০ টাকা ও অপ্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য ২০ টাকা। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধা ও প্রতিবন্ধিরা বিনা টিকিটে মেলায় প্রবেশ করতে পারবেন।