
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামী লীগের আগামী শনিবার (৩ সেপ্টেম্বর) ২৫ বছর পর সম্মেলনকে কেন্দ্র করে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। দীর্ঘ দিন পর সম্মেলনের আয়োজন উপলক্ষে গত ২৪ আগস্ট সোনারগাঁও উপজেলা পরিষদের সভাকক্ষে এক প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে নিজেদের মধ্যে কয়েকটি ভাগে বিভক্তি থাকা সত্ত্বেও সম্মেলনের প্রস্তুতি সভায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সকল নেতাকর্মীকে একসঙ্গে সভায় অংশ নিতে দেখা গেছে। তবে প্রস্তুতি সভায় উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতাকর্মীদেরকে কোন মূল্যয়ন করেননি বলে অনেকেরই এমন অভিযোগ। বর্তমান উপজেলা আওয়ামী লীগের আহবায়ক কমিটি’র ৩বছর অতিবাহিত হলেও পৌরসভা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের কোন কমিটিই তারা গঠন করতে পারেননি বলে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রতি উপজেলা বা থানা আওয়ামী লীগ কমিটি গঠিত করতে প্রতি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ হইতে নির্বাচিত ৩১ জন কাউন্সিলার ও উপজেলা বা থানা আওয়ামী লীগ কাউন্সিল কর্তৃক ইহার ত্রি-বার্ষিক নির্বাচনী সভায় প্রথম অধিবেশনে কো-অপশনকৃত ১৫ জন কাউন্সিলার নিয়ে উপজেলা বা থানা আওয়ামী লীগ কাউন্সিল গঠিত হইবে। এ ছাড়া উপজেলা বা থানা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সকল কর্মকর্তা ও সদস্যবৃন্দ কাউন্সিলার হইবেন। নিয়মানুযায়ী সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ মোট ৭১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি হবে। এদিকে আওয়ামীলীগের প্রবীণ নেতা সনমান্দি ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা হাজি ইসহাক মিয়া বলেন, যেহেতু ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ ও ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের এখনো কোন কমিটি গঠন করা হয়নি, তাই বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের গঠনতন্ত্র বর্হিভূতভাবে এবারের সম্মেলনটি হচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
গত তিন বছর যাবত বর্তমানে আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে সোনারগাঁও আওয়ামীলীগ পরিচালিত হলেও সর্বশেষ আওয়ামীলীগের সম্মেলন হয় ১৯৯৭ সালে। এবারের সম্মেলনে কে হচ্ছেন সোনারগাঁও আওয়াামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বা কে কোন পদ পাচ্ছেন এখন নির্ধারণ করতে পারেননি সোনারগাঁও আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা। আগামী শনিবার ৩ সেপ্টেম্বর উপজেলার শেখ রাসেল স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠেয় সম্মেলনে ১৪ জন কেন্দ্রীয় নেতা উপস্থিত থাকবেন বলে জানিয়েছে উপজেলা আওয়ামী লীগ। ১৯৯৭ সালের সম্মেলনে আবুল হাসনাতকে সভাপতি ও আবদুল হাই ভূঁইয়াকে সাধারণ সম্পাদক করে ৫১ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। ২০০৪ সালে আবুল হাসনাত এবং ২০১৪ সালে আবদুল হাই ভূঁইয়া মারা গেলে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়ীত্ব পান এড. সামসুল ইসলাম ভূঁইয়া ও সাধারণ সম্পাদকের দায়ীত্ব পালন করেন মাহফুজুর রহমান কালাম। পরে ওই কমিটির আরও ২০ জনের মৃত্যু হয়। পরে ভারপ্রাপ্তদের দিয়ে ১৭ বছর চলার পর ২০১৯ সালের ১৫ জুলাই সোনারগাঁও আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এড. সামসুল ইসলাম ভূঁইয়াকে আহ্বায়ক ও উপজেলা যুবলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুমকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে ৮ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে ঘোষনা করেন নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগ। এতে বাদ পড়েন নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁও) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল্লাহ আল কায়সার ও আগের কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালাম। পরে আব্দুল্লাহ আল কায়সার ও মাহফুজুর রহমান কালাম পন্থীরা এই আহবয়াক কমিটিকে প্রত্যাখ্যান করে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় দলীয় ও জাতীয় কর্মসূচিগুলো ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সামসুল ইসলাম ভূঁইয়া ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালাম পালন করতে থাকেন। এতে করে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগ থেকে ঘোষিত ৮ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি।
পরে আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে ২০২১ সালে ২২ মার্চ আব্দুল্লাহ আল কায়সারকে প্রথম যুগ্ম আহ্বায়ক করে নতুন করে ২১ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। বর্তমানে ২১ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটিকে নিয়েই ঘুরপাক খাচ্ছে উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন। দীর্ঘ ১৮ বছর যাবৎ সোনারগাঁও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে থাকা প্রবীণ রাজনীতিবিদ এড. সামসুল ইসলাম ভূঁইয়াই আবার সভাপতির দায়ীত্ব পাচ্ছেন, নাকি বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল্লাহ আল কায়সার হচ্ছেন সভাপতি হচ্ছেন। এ নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। আব্দুল্লাহ আল কায়সারের সমর্থকরা বলেন , এবার নেতৃত্বের পরিবর্তন হওয়া উচিত। সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল্লাহ আল কায়সারই সভাপতি হওয়ার যোগ্য। অপরদিকে সাধারণ সম্পাদক পদটি কে পাচ্ছেন এ নিয়েও নেতাকর্মীরা রয়েছে দ্বিধাদ্বন্দ্বে। অন্যদিকে ১৯৮৬ সাল থেকে সোনারগাঁও উপজেলা ছাত্রলীগের রাজনীতিতে শুরু করে ১৯৯১ সালে বিএনপি ও ২০০১ সালে বিএনপি-জামাত জোট সরকারের আমলে আন্দোলন সংগ্রামে মাঠ কাপানো আওয়ামীলীগ নেতা সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালামকে বর্তমান সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামীলীগের কমিটিতে ঠাই না দিতে আওয়ামীলীগের বিভক্তি গ্রুপগুলো জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে কালাম সমর্থকদের অভিযোগ।
তবে সোনারগাঁও আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতাকর্মীরা ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, যোগ্য ও পরীক্ষিত নেতাদের কমিটিতে না রাখলে পরে বিরোধী দলের আন্দোলন-সংগ্রাম শুরু কালে ওই সময় সোনারগাঁও আওয়ামীলীগকে চরম মূল্য দিতে হবে।