
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)‘র সাথে পুলিশের হওয়া সংঘর্ষে নারায়ণগঞ্জ শহর প্রায় সাড়ে ৩ ঘন্টা রণক্ষেত্রে পরিনত হয়েছিল। এই সময়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছে ১ জন। আহত হয়েছে আরও অর্ধশত রাজনৈতিক নেতা, পুলিশ সদস্য, সাংবাদিক ও সাধারণ মানুষ ।
নারায়ণগঞ্জে ২নং রেল গেইট এলাকা থেকে বৃহস্পতিবার (১ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টায় সংঘর্ষ শুরু হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী, পুলিশ ও বিএনপি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিএনপির ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে জেলা ও মহানগর বিএনপির উদ্যোগে শোভাযাত্রা করতে নগরের ডিআইটি বাণিজ্যিক এলাকার আলী আহাম্মদ চুনকা পাঠাগারের সামনে নেতা-কর্মীরা জড়ো হতে শুরু করেন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পুলিশ বিএনপির নেতা-কর্মীদের শোভাযাত্রা করতে বাধা দেয়। এ সময় বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। বিএনপির নেতা-কর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। অন্যদিকে, পুলিশ লাঠিপেটা করে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। একপর্যায়ে পুলিশ বিএনপির নেতা-কর্মীদের লক্ষ্য করে কাঁদানে গ্যাসের শেল ও শটগানের গুলি ছোড়ে। দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত দফায় দফায় চলে সংঘর্ষ।
এ সময় ২নং রেল গেইট এলাকা থেকে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে উকিলপাড়া, মন্ডলপাড়া, দেওভোগ এলাকায়। সেখানে মোটরসাইকেলসহ বেশ কয়েকটি যানবাহন ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।
নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাজমুল আলম বলেন, ‘সড়কে নেমে বিশৃঙ্খলা করতে চাইলে প্রথমে তাদের বাঁধা দেয়। কিন্তু তারা বাধা উপেক্ষা করে পুলিশের ওপর ইটপাকেল নিক্ষেপ করে। সড়কে আগুন জ্বালিয়ে দেয়।’
কে এই নিহত শাওন :
তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘যে ছেলেটি মারা গেছে, সে একটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের ভাতিজা। নিহত ব্যক্তি বিএনপির কর্মী, নাকি পথচারী সেটি এখনও তদন্ত চলছে। আমি পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছি।’ এমন মন্তব্যের পর শাওনের পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন ছড়িয়ে পড়েছে নারায়ণগঞ্জে।
জানা গেছে, ছেলেটির পুরো নাম শাওন প্রধান (২০)। সে ফতুল্লার এনায়েতনগর এলাকায় একটি কারখানায় ওয়েল্ডিং মিস্ত্রি হিসেবে কাজ করতেন। তার বাড়ি নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার বক্তাবলী ইউনিয়নের পূর্ব গোপালনগর এলাকায় ছেলে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অধ্যাপক মামুন মাহমুদ বলেন, ‘নিহত রাজ আহম্মেদ শাওন জাতীয়তাবাদী যুবদলের সদস্য ছিল। বিএনপির মিছিলে অংশ গ্রহণ করেছে, সেই তথ্য-চিত্র ও প্রমাণ আমাদের কাছে রয়েছে।’
তবে, বক্তাবলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম শওকত আলী জানান, আমার চাচাতো ভাইয়ের ছেলে। সে কোন ভাবেই বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত ছিল না। প্রমান থাকলে দেন। নারায়ণগঞ্জের পরিস্থিতি থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। তবে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য মোড়ে মোড়ে পুলিশ পাহাড়ায় রাখা হয়েছে।
রূপগঞ্জে বিএনপি নেতার বাড়িঘরে হামলা ভাংচুর:
রূপগঞ্জে বিএনপি নেতার বাড়িঘওে ভাংচুর চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। তবে বিএনপি নেতার দাবি, কেন্দ্রের পুর্বঘোষিত কর্মসুচীকে কেন্দ্র কওে আওয়ামীলীগের লোকজন এ ঘটনা ঘটিয়েছে। এতে করে এলাকায় চরম আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। বৃহস্পতিবার বিকেলে উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়নের নগরপাড়া এলাকায় ঘটে এ ঘটনা। কায়েতপাড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও কায়েতপাড়া ইউনিয়ন বিএনপির আহবায়ক অ্যাডভোকেট গোলজার হোসেন অভিযোগ করে জানান, কেন্দ্রের পুর্বঘোষিত কর্মসুচী হিসেবে শুক্রবার (২ সেপ্টেম্বর) সকালে জ্বালানী তেলের মুল্যে বৃদ্ধিসহ দ্রব্যে মুল্যের উর্ধ্বগতির প্রতিবাদে কায়েতপাড়ায় বিএনপি নেতাকর্মীদের বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভা করার কথা ছিলো। ওই শান্তিপুর্ণ বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সভা পন্ড করার জন্যই বৃহস্পতিবার বিকেলে স্থানীয় আওয়ামীলীগের লোকজন লাঠিসোঠা নিয়ে গোলজার হোসেনের নগরপাড়ার বাড়িতে হামলা চালালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর করে। এ ঘটনার পর থেকে পরিবারের লোকজন চরম আতঙ্কে রয়েছে বলেও জানান গোলজার হোসেন। তবে কায়েতপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ও চেয়ারম্যান আলহাজ্ব জাহেদ আলী বলেন, বিএনপি কয়েকভাবে বিভক্ত। হয়তো অভ্যন্তরীন কোন্দলকে কেন্দ্র করে তাদের নিজেদের মধ্যে লেগে এ ঘটনা ঘটেছে। এ ধরনের ঘটনা আমার জানা নেই। ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে উপজেলা বিএনপির আহবায়ক মাহাফুজুর রহমান হুমায়ুন বলেন, আওয়ামীলীগ একের পর এক হামলা মামলার ঘটনা ঘটিয়ে বিএনপিকে দমাতে পারবেনা। এ বিষয়ের রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এএফএম সায়েদ বলেন, এ ধরনের ঘটনায় কোনো অভিযোগ পাইনি। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।