
ভবনটি শতবছরের পুরোনো। ছাদ ও দেয়ালে জন্মেছে বটগাছ। সামনের বারান্দার অংশ অনেক আগে ধসে পড়েছে। খসে পড়েছে পলেস্তারা। বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে। খুলে পড়েছে দোতলার দরজা-জানালা। ভুতুড়ে সেই ভবনে ঝুঁকি নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করছেন ব্যবসায়ীরা। প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে ওই ভবনের সামনে দিয়ে শত শত মানুষ যাতায়াত করেন।
নারায়ণগঞ্জ শহরের টানবাজার ৩৪ নম্বর মহিম গাঙ্গুলী রোডে সাধনা ঔষধালয় ভবনের এই চিত্র দেখা যায়। টানবাজার দেশের রং, সুতা ও কেমিক্যালের পাইকারি ব্যবসাকেন্দ্র। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোর তালিকায় সাধনা ঔষধালয় ভবনের অবস্থান ৪ নম্বরে।
ওই ভবনের ভাড়াটিয়া জনতা বস্ত্রালয়ের মালিক শান্তি রঞ্জন। তাঁর দোকানে পানি পড়তো, তাই ছাদের নিচে আবার টিনের চাল দিয়েছেন। ভবনের দোতলা অকেজো হয়ে পড়েছে। নিতাইগঞ্জে ভবন ধসের পর সিটি করপোরেশনের লোকজন এসে খোঁজখবর নিয়ে গেছেন। ভবনটির মালিকানা নিয়ে আদালতে মামলা চলছে বলে জানান শান্তি রঞ্জন।
একই এলাকার ২১ নম্বর এস এম মালেহ রোড এলাকায় এমদাদুল হক ভুঁইয়ার মালিকানাধীন দোতলা জরাজীর্ণ ভবন। ওই ভবনের ছাদেও বটগাছ জন্মেছে, পলেস্তারা খসে পড়েছে ও ফাটল দেখা দিয়েছে। ওই ভবনের নিচে কেমিক্যালসহ সাতটি দোকান রয়েছে।
২৩ বছর ধরে ওই ভবনে ভাড়ায় ব্যবসা পরিচালনা করছেন মেসার্স তালুকদার কেমিক্যালসের মালিক মো. জাকারিয়া। তোলপাড়নিউজকে তিনি বলেন, নিতাইগঞ্জে ভবন ধসে মৃত্যুর ঘটনার পর প্রশাসনের লোকজন এসেছিল। মালিকের খোঁজ খবর নিয়ে গেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শহরের নিতাইগঞ্জ, টানবাজার, দেওভোগ পাক্কারোড, চাষাঢ়া, গলাচিপা, নয়ামাটি এলাকায় ৪২টি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা করে অপসারণে মালিকদের নোটিশ দেয় সিটি করপোরেশন। ঝুঁকিপূর্ণ ভবন বেশি শহরের টানবাজারে ১৬টি। এ ছাড়া নিতাইগঞ্জে সাতটি, দেওভোগ পাক্কা রোডে ৯টি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন রয়েছে।
মালিকেরা ভবন অপসারণে উদ্যোগ না নিলে ২০১৬ সালের ১১ অক্টোবরে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা প্রকাশ করে ১৫ দিনের মধ্যে ভেঙে ফেলতে স্থানীয় পত্রিকায় জরুরি বিজ্ঞপ্তি ঘোষণা করে সিটি করপোরেশন। ওই বছরের ১৪ নভেম্বর ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোর গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে চিঠি দেওয়া হয়। কিন্তু গত সাত বছরে ভবনগুলো অপসারণে ভবন মালিক, রাজউক ও সিটি করপোরেশন কেউই উদ্যোগ নেয়নি।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) শহীদুল ইসলাম তোলপাড়নিউজকে বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনমালিকদের নিজ উদ্যোগে অপসারণের জন্য পুনরায় নোটিশ দেওয়া হবে। তারা অপসারণে উদ্যোগ না নিলে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এর মধ্যে গেল ১৮ মার্চ নিতাইগঞ্জে শত বছরের পুরোনো দোতলা একটি ভবনে গ্যাসের লিকেজ থেকে বিস্ফোরণে তিনজনের মৃত্যু হয়। ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে ব্যবসায়ীদের কয়েক কোটি টাকার মালামাল নষ্ট হয়। পরবর্তী সময়ে ধসে পড়া ভবনটি ভেঙে ফেলে সিটি করপোরেশন। এর আগে ভেঙে ফেলা হয় আরেকটি ভবন।
নিতাইগঞ্জ ও টানবাজারে সবচেয়ে বেশি পুরোনো জরাজীর্ণ ভবন রয়েছে বলে জানিয়েছেন সিটি করপোরেশনের ১৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর অসিত বরণ বিশ্বাস। তিনি বলেন, এ দুটি এলাকায় শতবছরের বেশি পুরোনো জরাজীর্ণ ভবন রয়েছে। চুন–সুরকির তৈরি জরাজীর্ণ ভবনগুলো যেকোনো সময় ধসে পড়ে বড় দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটতে পারে।
পুরোনো ভবন নিয়ে উদ্বেগ–উৎকণ্ঠার কথা জানান নিতাইগঞ্জ পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শংকর সাহা। তোলপাড়নিউজকে তিনি বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো দ্রুত অপসারণে উদ্যোগ নিতে হবে। মানুষের জান ও মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোর একটি তালিকা রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে জানান রাজউকের জোন-৮ অঞ্চলের পরিচালক মোহাম্মদ ইয়াহ্ ইয়া খান। তিনি বলেন, এ বিষয়ে প্রধান কার্যালয় থেকে নির্দেশনা এলে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।