
আগের দামে কেনা সয়াবিন তেল নতুন বাড়তি দামে বিক্রির অভিযোগে অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে গতকালও অভিযান চালিয়েছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। চট্টগ্রাম, সিলেট, সিরাজগঞ্জ ও বরগুনায় পরিচালিত অভিযানে অবৈধভাবে মজুদ করা বিপুল পরিমাণ তেল জব্দ করা হয়েছে। এসব ঘটনায় জরিমানাও করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি জানান, চট্টগ্রাম নগরীর কর্নেল হাটে পুরনো দামে কেনা খোলা সয়াবিন মজুদ রেখে বেশি দামে বিক্রির অভিযোগে জামাল অ্যান্ড ব্রাদার্স নামের একটি দোকানকে জরিমানা করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. ফয়েজ উল্যাহ জানান, নতুন দাম নির্ধারণ হওয়ার আগে ১৩৫ টাকা দরে প্রতি লিটার সয়াবিন কিনে রেখেছিলেন দোকান মালিক। কিন্তু খোলা সয়াবিন প্রতি লিটার নতুন দর ১৮০ টাকায় প্রতি লিটার বিক্রি হচ্ছিল। সেখানে ৪ হাজার লিটার খোলা তেল পেয়েছি। বেশি দামে তেল বিক্রি এবং তেল মজুদ করায় দোকানের মালিক আইয়ুব আলীকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
এ ছাড়া বেলা ১টার দিকে কর্নেল হাটের বিনিময় স্টোর নামের আরেকটি দোকানে অভিযানে যায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এ অভিযানের ব্যাপারে বিস্তারিত জানা যায়নি।
এর আগে সোমবার নগরীর পাহাড়তলি বাজারে সিরাজ স্টোরের গুদামে ১৫ হাজার লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়ায় ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা জরিমানা করে অধিদপ্তর। রবিবার নগরীর ষোলশহর দুই নম্বর গেট এলাকার কর্ণফুলী মার্কেটের মুদি দোকান খাজা স্টোরের গুদাম থেকে ১ হাজার ৫০ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল উদ্ধার করা হয়। এর আগের দিন শনিবার রাতে ফটিকছড়িতে এক মুদি দোকানির বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ২ হাজার ৩২৮ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল উদ্ধার করে স্থানীয় প্রশাসন।
সিলেট প্রতিনিধি জানান, সিলেটে কামাল ব্রাদার্স নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে ৪ হাজার ৬০০ লিটার সয়াবিন তেল জব্দ করেছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। গতকাল দুপুরে নগরের কাজীটুলা এলাকার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটির গুদামে অভিযান চালিয়ে এই সয়াবিন তেল জব্দ করা হয়।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সিলেটের উপ-পরিচালক মো. ফখরুল ইসলাম বলেন, গুদামে বিপুল পরিমাণ সয়াবিন তেল মজুদ রাখার খবর পেয়ে আমরা অভিযান চালিয়ে এর সত্যতা পাই। জব্দ তেল আগের দামে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে বিক্রি করা হবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা খবর পেয়েছি— কিছু অসাধু ব্যবসায়ী আগের দামে কেনা সয়াবিন তেল নতুন বাড়তি দামে বিক্রি করে ক্রেতাদের সঙ্গে প্রতারণা করছেন। এমন খবরে আমরা নগরজুড়ে অভিযান চালাচ্ছি।
এর আগে মঙ্গলবার দিনভর নগরের কালিঘাট এলাকায় অভিযান চালিয়ে মাহের ব্রাদার্স নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের গুদামে মজুদ ৫ হাজার লিটার সয়াবিন তেল উদ্ধার করা হয়। এরপর অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতেই বিভিন্ন দোকানি ও সাধারণ মানুষের কাছে এগুলো আগের দামে বিক্রি করা হয়।
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, আগের কেনা সয়াবিন তেল মজুদ করে উচ্চমূল্যে বিক্রির অভিযোগে ৩ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে ৭০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এসময় মজুদ করা প্রায় ৩ হাজার লিটার সয়াবিন তেল আগের দামে খোলাবাজারে বিক্রি করা হয়। গতকাল দুপুর ১টার দিকে বেলকুচি উপজেলার মুকুন্দগাঁতি বাজারে এ অভিযান পরিচালিত হয়।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সিরাজগঞ্জের সহকারী পরিচালক মাহমুদ হাসান রনি জানান, বাজারের রায়হান, আব্দুল মালেক ও সুমন স্টোরে অভিযান চালানো হয়। এসময় মজুদ অবস্থায় তাদের কাছে আগের মূল্যের প্রায় ৩ হাজার লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়া যায়। এ ঘটনায় তাদের ৭০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। রায়হান স্টোরকে সাময়িক সিলগালা করা হয়েছে। পরে জব্দ বোতলজাত সয়াবিন তেল খোলা বাজারে বিক্রি করা হয়।
বরগুনা প্রতিনিধি জানান, বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার পাথরঘাটা ও কাকচিড়া বাজারে অভিযান চালিয়ে দুই দোকানিকে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। বরগুনার ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক বিপুল বিশ্বাস জানান, মুক্তা স্টোরে ৮০০ টাকার তেল ৯৮০ টাকায় বিক্রির প্রমাণ পাওয়া যায়। এতে ওই প্রতিষ্ঠানকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। পরে শাহিন স্টোর নামের একটি তেলের ডিলারের দোকানে অভিযান চালিয়ে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
পরে উপজেলার কাকচিড়া বাজারের বিভিন্ন দোকানে অভিযান পরিচালনা করে ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ সময় নির্ধারিত মূল্যে তেল বিক্রি ও মজুদ না করার নির্দেশ দেয়া হয়।